রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে পানিবন্দি ১ হাজার ৮শো পরিবার

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে পানিবন্দি ১ হাজার ৮শো পরিবার

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে পানিবন্দি ১ হাজার ৮শো পরিবার
রাজশাহীর বাঘায় পানিবন্দি পরিবার

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ১৫টি চরের প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবার এক সপ্তাহ যাবৎ পানিবন্দি রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পর্যন্ত পানিবন্দি পরিবারের মাঝে কোনো ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে ভাঙনে দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। তারা অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দিয়াড়কাদিরপুর একটি চর। এই চরে শরিফুল ইসলাম, করিম মোল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাফিজুর রহমান, সাবিরুল ইসলাম, আবেদ আলী, আজিজুল ইসলাম, কালাম মোল্লা, কাদের মোল্লা, আনিসুর মোল্লা, আবু সামা, আবদুর রাজ্জাক, কালাম হোসেন, সিদ্দিক হোসেনসহ ২৩টি পরিবার বসবাস করে।

এক সপ্তাহ যাবত তারা পানি বন্দি হয়ে আছে। তাদের মতো আরো ১৪টি চরের একই অবস্থা। তাদের বের হওয়ার কোনো পথ নেই। তারা এই বাড়ি থেকে ওই বাড়ি যেতে পারে না।যাতায়তের জন্য টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডিঙ্গি নৌকা। এই নৌকায় এক জনের বেশি ওঠা যায় না। এভাবে তাদের চলছে এক সপ্তাহ যাবৎ। আশপাশে বাজারও নেই।

বাজার অনেক দূর, যেতে হলেও একইভাবে যায়। তাদের আয়ের উৎস কৃষি কাজ। বর্তমানে চারদিকে পানি। বাড়িসহ সব জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। পানি ওঠার কারণে তাদের কোন কাজ নেই। তবে এরমধ্যে কেউ কেউ মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে।

পদ্মার ১৫টি চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস করে। পরিবার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬০০। এরমধ্যে দিয়াড়কাদিপুর চরে ২৩টি পরিবারে জনসংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। তারা প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্যের জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে বাড়ি করে বসবাস করে। ২০ কাঠা জমি এক বছরের জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা।

এই চরে বসবাস করে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর জালাল উদ্দিন। মেম্বারের বাড়িতে পানি উঠায় তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।

এই চরে সাবিরুল ইসলাম বলেন, আমি, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে অন্যের কাছে থেকে জমি ভাড়া নিয়ে দুটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। তারপর পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি উঠেছে। বর্তমানে দুটি ছাগল ও দুটি গরু নিয়ে বিপদে আছি।

তার স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ঘরে চাল ছিল না। এখন পানি উঠায় কৃষি কাজ নেই। তাই কোনো কোনো সময়ে জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে। যে টাকা হয় এই দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর জালাল উদ্দিন বলেন, আমি ২০১৬ সালে মেম্বর নির্বাচিত হয়েছি। চলতি বছরে সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাই নি। পদ্মার চরের মধ্যে দিয়ারকাদিরপুর, টিকটিকিপাড়া চরসহ চকরাজাপুর ও কালিদাসখালির কিছু অংশ নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে পরিবার রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক। ভোটার রয়েছে এক হাজার ৩৫ জন। চরের মধ্যে আমার ওয়ার্ড অধিকাংশ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।

এছাড়া পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ফলে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। লক্ষ¥ীনগর ও চরকালিদাসখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মার ভাঙনে হুমকির মধ্যে রয়েছে। এদুটি স্কুলও যে কোনো সময় পদ্মা গর্ভে চলে যাবে।

এদিকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কালিদাসখালি চরের মেম্বর আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার প্রায় ১০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরমধ্যে তিন বিঘা জমির উপর আম বাগান পদ্মা গিলেছে। আমার ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৮০০। পরিবার রয়েছে ২৬৫টি। তাদের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। তারা এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পদ্মার চরের ৩ হাজার ৬০০টি পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে ৫০ ভাগ বাড়িতে পানি উঠেছে। ফলে তারা এখন পানিবন্দি রয়েছে। চরের অধিকাংশ বাড়ির পাশে পানি এসেছে। কিছু কিছু বাড়ি ডুবেও গেছে। এছাড়া সিংহভাগ জমির ফসল পানির নিচে। ভাঙনের কারণে চরের দেড় শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে। তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কিন্তু তাদের জন্য কোনো সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়নি। ফলে তারা গরু-ছাগল নিয়ে মানবেতর জীনন যাবন করছে।

উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, বৃহস্পতিবার পদ্মার চর এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হবে। বরাদ্দ পেলে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করা হবে।

মতিহার বার্তা ডট কম – ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply